Kiosk অধ্যয়ন গাইড আৰু কৌশল
প্রতিভাধর মানুষের থেকে প্রথম এবং শেষ দাবিটাই হয় সত্যের প্রতি ভালোবাসা
Johann Wolfgang von Goethe,
1749 – 1832, German playwright/author |
“তুমি যদি প্রতিভাধর নাও হও, তবু তুমি এরিষ্টটল আবা আইনস্টাইনের মতো তোমার মনের সৃজন ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারো এবং ভবিষ্যতকে ভালোরকম পরিচালিত করতে পারো”
নিচের কৌশলগুলো তোমার নঞার্থক ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে প্রভাবী চিন্তাতে উৎসাহী করে তুলবে যাতে তুমি সমস্যাগুলোর সমাধানে পৌঁছুতে পারো। “বিজ্ঞান, কলা এবং কারখানা শিল্পের যেকোনো প্রতিভাধর ব্যক্তিদের কাছে সমগ্র ইতিহাস জুড়ে এই কৌশলগুলো এক সাধারণ মনন রীতি হিসেবে কাজ দিয়ে এসছে।”
১) আবার ভাবো!
সমস্যা একটার দিকে নানা দিক থেকে চোখ দাও।
২) দেখো এবং দেখাও!
রেখা এবং রঙের চিত্র দিয়ে তোমার দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে বিশ্লেষণ করো
৩) করে দেখাও!
প্রতিভাধরেরা করে দেখিয়ে প্রভাবিত করেন।
৪) সংযোজন করো!
ভিন্ন চিন্তা এবং কাজের মধ্যে সংযোগ ঘটাও।
৫) গড়ো!
সম্পর্ক গড়ে তোল।
৬) বৈপরীত্য!
বৈপরীত্যকে নিয়ে ভাবো।
৭) রূপক/ উপমা!
উপমার সাহায্য নিয়ে ভাবো।
৮) ব্যর্থতা!
তোমার ব্যর্থতার থেকে শেখাটা হলো ব্যর্থতাকে ব্যবহার করবার একটি নজির।
৯) ধর্য ধরো!
অনুপ্রেরণাগুলোকে ধারণা ভেবে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ো না।
ক) কোনো বন্ধু বা সহকর্মীকে খবর রাখতে বলো।
খ) নিজেকে জাহির করো।তোমার কর্মদক্ষতার তালিকা বা প্রমাণপত্র পাঠাও যাকে পাঠালে কাজ দেবে।স্থানীয় রোজগার সমাচারে চোখ রাখো, বা তোমার কলেজে সেরকম সংবাদ যদি কোথাও পরিবেশিত হয় চোখ রাখো।
গ) তোমার কথা শুনবার লোক বাড়াও। আর কিসে কিসে তোমার দক্ষতা রয়েছে, ভাবো আর বলো।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ভাবতেন যে একটা সমস্যার স্বরূপ সম্পর্কে জানতে গেলে কতভাবে আর কীভাবে একে পুনর্গঠন করে দেখানো যেতে পারে সেই দিয়ে শুরু করা উচিত। তিনি দেখেন যে প্রথমেই একটা সমস্যাকে তিনি যেভাবে দেখতেন সেগুলো অত্যন্ত আসক্তিপূর্ণ। প্রায়ই সমস্যা নিজেই পুর্নগঠিত হয়ে যায় এবং নতুন কিছু একটা চেহারা নিয়ে নেয়।
ক) তোমার লেখাপড়াতে ছবি, রেখাচিত্র ইত্যাদি কীভাবে ব্যবহার করতে পারো?
খ) ধারণা, মন-মানচিত্র, শব্দভাণ্ডারের চিত্রমালা, ফ্লাসকার্ড নিয়ে পরামর্শগুলো দেখো।* দরকারে সেরকম বই ঘাটাতে পারো।
গ) ছবি বা রেখচিত্রকে তুমি কীভাবে ব্যবহার করতে পারো তার একটা নমুনা তৈরি করো, ছেপে তোমার পড়ার টেবিলে সেঁটে রাখো।
আইনষ্টাইন যখন কোনো সমস্যা নিয়ে ভাবতেন, তিনি সব সময় তাঁর বিষয়টিকে যতটা সম্ভব নানাভাবে সূত্রবদ্ধ করবার দরকার বোধ করতেন, ছবি সহ। সমাধানগুলোর তিনি ছবি এঁকে নিতেন , এবং ভাবতেন যে শব্দ বা সংখ্যাগুলো তাঁর চিন্তন মনন প্রক্রিয়াতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না।
ক) সম্ভবত মৌলিকতা সাফল্যের কোনো চাবি কাঠি নয়, বরং চিন্তা এবং উপায়গুলোর নিরন্তর প্রয়োগই সমাধানে পৌঁছুতে বেশি সাহায্য করে।
খ) জীবকূলে প্রতিভাধরেরা ভাগ্যবান, কেননা তাদের সেগুলোই অবশ্যই করতে হয় যেগুলো তারা অবশ্যই করতে চান।
ডবল্যু এইচ ওডেন ( ১৯০৭-১৯৭৩) ইং-মার্কিন কবি
গ) প্রতিভাধরতো আর কেউ নন, যাদের ধর্য ধরার দারুণ সব ক্ষমতা রয়েছে তারাই প্রতিভাধর।
টমাস আলভা এডিশনের ১,০৯৩টা পেটেন্ট ছিল। তিনি উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতেন এক অদ্ভূৎ উপায়ে। নিজেকে এবং সহযোগীদের ধারণা করবার জন্যে কোটা বেঁধে দিতেন। অর্থাৎ কেন কতটা নতুন ধারনা দেবেন সেই সংখ্যা বাঁধা থাকত। বিজ্ঞানের সমগ্র ইতিহাসের ২,০৩৬ জন বিজ্ঞানীদের নিয়ে ডাভিসে এক অধ্যয়ন চালিয়েছিলেন কালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কেইথ সিমন্টন। তিনি দেখলেন যে সবচে’ শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানীরাও কেবল যে মহান সব আবিষ্কার করেছেন তাই নয়, প্রচুর ‘বাজে’ আবিষ্কারও ছিল তাঁদের। তাঁরা কেউ ব্যর্থ হতে ভয় পেতেন না, অথবা মধ্যমেধার সিদ্ধান্তে যেতেও নয়। তাতেই তাদের দ্বারা আশ্চর্য সব আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল।
অষ্ট্রিও সাধু গ্রেগো মেন্ডেল বংশবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটাবার কথা ভেবে গণিত এবং জীববিদ্যার সংযোজন ঘটিয়েছিলেন। আধুনিক জিন বিজ্ঞান (genetics) তাঁর আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
ক) সম্পর্ক কেবল বস্তুর মধ্যেই নয়।মানুষের সঙ্গেও গড়ে তোল, তাদের প্রশ্ন করো।
খ) তোমার কাজের ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষের সঙ্গে পরিচিত হও, এটি তোমার দক্ষতার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
গ) যেকোনো একজন মানুষের সম্পর্কে লেখো যার সঙ্গে তুমি যোগাযোগ করে উঠতে পারবে, এবং লেখো উনি কী করে তোমাকে সাহায্য করতে পারবেন। ছেপে নিয়ে সংগ্রহে রাখো, বা ডায়রিতে লিখে রাখো।
দ্য ভিঞ্চি একটি ঘন্টা এবং জলে পাথর পড়ার শব্দের মধ্যে সম্পর্ক কল্পনা করেছিলেন। এটি তাঁকে এই সিদ্ধান্তে নিয়ে গিয়েছিল যে শব্দের গতি তরঙ্গের মতো। স্যামুয়েল মোর্সে ঘোড়ার রিলে ষ্টেশন দেখে দেখে টেলিগ্রাফের রিলে ষ্টেশন আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন।
ক) “বৈপরীত্য”এগুবার দুটো পথ একটা পরিস্থিতির সামনে নিয়ে আসে, কিন্তু তাদের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্য থাকে। যেমনঃ ‘ডান’ এবং ‘বাম’ দুটোই দিক, কিন্তু কোনটি সঠিক?
খ) দূরদর্শন অনুষ্ঠান ‘সিসাম স্ট্রীট’এর ‘দ্য মাপেটস’এর এলমো চরিত্রটি ছোট্ট শিশুদের বৈপরীত্যের সম্পর্কে ভালো ধারণার শিক্ষা দেয়।
পদার্থবিজ্ঞানী নেইল বোর বিশ্বাস করতেন যে যদি তুমি বিপরীত বস্তুকে এক সঙ্গে ধরতে পারো, তবে তোমার চিন্তন প্রক্রিয়া থেমে দাঁড়ায় এবং মন এক নতুন স্তরে গিয়ে উপস্থিত হয়। আলোকে একই সঙ্গে অনুকণা এবং তরঙ্গ (a particle and a wave) দু’ভাবেই কল্পনা করবার তাঁর ক্ষমতাই তাঁকে পরিপূরকতার নীতি (the principle of complementarity ) নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার দিকে নিয়ে যায়। চলমান চিন্তনপ্রক্রিয়াকে কে স্তগিত করিয়ে বা থামিয়ে দিতে পারলেই তোমার মন এক নত্ন কাঠামো গড়ে তুলবে।
ক) রূপক হচ্ছে অস্বাভাবিক দুটো বস্তুর মধ্যে সংযোগ, ভাবনার কোনো সাধারণ পথ নয়।
দুঃখ সমূদ্র, সিংহ হৃদয় বা ইলশে গুড়ি বৃষ্টি যেমন
খ) ‘উপমা’কে ব্যাখ্যা করবার জন্যে ‘যেমন’, ‘যেন’, ‘মতো’ ইত্যাদি অব্যয় ব্যবহৃত হয়।
সভ্যি করে বলতে গেলে, উপমা তোমার শুধুই তুমি,
ভোর বেলাকার শিশির তুমি, ঝিনুক মাঝে মুক্তা তুমি
দূর আকাশের চাঁদ ও তুমি, চাঁদের পাশে তাঁরা ও তুমি
গভীর রাতের জ্যোৎস্না তুমি, সবকিছুতে শুধুই তুমি
এরিষ্টটল রূপককে প্রতিভার চিহ্ন বলে মনে করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ব্যক্তির দুটো স্বতন্ত্র অস্তিত্বের মধ্যে ঐক্য খুঁজে পাওয়ার এবং তাদের এক সঙ্গে যুক্ত করতে পারবার দক্ষতা আছে সে বিশেষ আশীর্বাদ নিয়েই জন্মেছে।
ক) এটি শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে যে মানুষের মস্তিষ্ক হচ্ছে ব্যর্থতার যন্ত্র। মস্তিষ্ক বাস্তবের আদর্শ প্রতিরূপ তৈরি করে, তাদের উপর কাজ করে, তাদের নিজের মতো ঠিকঠাক করে সাজায়গোছায় অথবা নতুন কিছু তৈরি করে ফেলে। যেকোনো সফল আদর্শই ( Model) আসলে ব্যররথতার উপরেই দাঁড়িয়ে পড়ে।
খ) আদাম ব্রিয়ান্তের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকার ‘দ্য টেলেন্ট কোডে’ ডানিয়েল কোয়েল একটি দারুণ কথা বলেছিলেন, “ প্রতিজন সি ই ও-রই একই রকম জ্ঞান বা বোঝাপড়া থাকেঃ ভুল, ব্যর্থতার তথা সমস্যাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করা... ভুলগুলো এক অতি উচ্চাঙ্গের জ্ঞানলাভের অবস্থা তৈরি করে যার সঙ্গে স্থির ‘সফল’ পরিস্থিতিগুলোর কোনো তুলনাই হতে পারে না।”
যখনই আমরা কিছু একটা করবার চেষ্টা করি এবং ব্যর্থ হই, আমরা সে কাজ ছেড়ে অন্য কিছু একটা কাজে লেগে পড়ি। এ হচ্ছে সৃজনশীল দুর্ঘটনার প্রথম নীতি। ব্যর্থতা উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে পারে তখনি যখনই আমরা তার পরিণামগুলোকে অনুৎপাদনশীল বলে ভেবে নেব না।তার বললে, অন্য পরিণামে পৌঁছুবার জন্যে প্রক্রিয়াটিকে, উপকরণগুলোকে, এবং কীকরে তুমি বদলটা ঘটাতে পারো সেসব বিশ্লেষণ করো। এই প্রশ্ন করো না যে ‘আমি ব্যর্থ হলাম কেন?” বরং করো, “আমি করলামটা কী?”
তোমার ধারণাগুলোর প্রাপ্য পুরস্কার পাবার জন্যে ধারণাগুলোকে ধর্যের সঙ্গে প্রয়োগ করো।
প’ল সিজান ( ১৮৩৯-১৯০৬) উনিশ শতকের মহান চিত্রশিল্পীদের অন্যতম। তাঁকে প্রায়ই আধুনিক চিত্রকলার জনক বলে ভাবা হয়। ইম্প্রেশনিষ্ট এবং কিউবিষ্টদের মধ্যে একজন আভাঁ গার্ড সেতু তিনি। জীবৎকালে তাঁর ছবির গুটি কয় মাত্র প্রদর্শনী হয়েছিল। কিন্তু তাঁর পরবর্তী শিল্পীদের উপর তাঁর আকার এবং আধেয়র প্রভাব ছিল ব্যাপক। জীবনের শেষ পর্যায়েও তাঁর প্রতিভা কোনো স্বীকৃতি পাচ্ছিল না। ২২ বছর বয়সে বিখ্যাত শিল্পবিদ্যালয় Ecole des Beaux-Arts তাঁকে ছাত্র হিসেবে নিতে অস্বীকার করেছিল।তাঁর একক প্রদর্শনী হয়েছিল যখন তাঁর বয়স ৫৬। বহু বছরের ধর্য এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার পরিণাম ছিল তাঁর প্রতিভা।